আসসালামু আলাইকুম প্রিয় পাঠক। সকলে কেমন আছেন আশা করি সকলে আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। প্রিয় পাঠক আপনারা জানেন প্রত্যেক বছর পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) পুরো বিশ্বে উদযাপন করা হয়। ঠিক আমাদের দেশেও পালন করা হয়। অনেকে বলে থাকেন ঈদে মিলাদুন্নবী হচ্ছে মুমিনের ঈদ। তো প্রত্যেক বছর রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখে ঈদে মিলাদুন্নবীর আয়োজন করা হয়। ঠিক সেইভাবে এই বছর ও আয়োজন করা হবে বলে জানান আয়োজক কমিটি।
আগামী ১৫ই সেপ্টেম্বর আরব দেশে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা হবে এবং আমাদের বাংলাদেশে ১৬ই সেপ্টেম্বর রোজ সোমবার পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন করা হবে।
প্রশ্ন : কুরআন মজীদ ও হাদীস শরীফের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর বৈধতার প্রমাণ পেশ করুন।
উত্তর : ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষে দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপন করার আগে আমরা মিলাদ শব্দটির আভিধানিক ও শরয়ী অর্থ ব্যাখ্যা করতে চাই।
‘মিলাদ’ শব্দটির মূল ‘বেলাদত’ যার অর্থ হলো জন্ম। অতএব, আরবী ভাষায় মীলাদ শব্দটি জন্মের স্থান ও সময়কে বোঝায়। শরিয়তের আলোকে আমরা মিলাদ বলতে বুঝি সেই সব ঘটনা যা নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর বেলাদত তথা ধরাধামে শুভাগমনের সময় ঘটেছিল; আর এতে আমরা তাঁর সকল বিষয় বর্ণনা করার সুযোগ পেয়ে থাকি; আমরা তাঁর প্রতি দুরূদ-সালাম পেশ করার সুযোগও পেয়ে থাকি। মানুষের কাছে মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর অনন্য ও অনুপম গুণাবলী এবং প্রশংসা বর্ণনা করার সুযোগ আমরা মিলাদের মজলিসে পাই। মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হলো ধর্ম প্রচারের একটি বড় ধরণের উৎস। এই পবিত্র শুভক্ষণে আলেম সমাজের জন্যে মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর জীবন আদর্শ, নৈকিতা, ঐতিহ্য, ধর্মীয় বিষয়াদি প্রচার করা অবশ্য কর্তব্য।
আমরা এবার কুরআন মজীদ, হাদীস শরীফ ও উলামায়ে কেরামের ঐকমত্যের ভিত্তিতে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর প্রমাণ পেশ করছি।
কুরআন মজীদ কুরআন মজীদের আয়াতসমূহ মীলাদ উদ্যাপনের বৈধতাই শুধু প্রমাণ করে না, এগুলোর মোস্তাহাব (প্রশংসনীয়) হবার প্রমাণও বহন করে।
১. আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ ফরমান- وَسَلاَمٌ عَلَیْہِ یَوْمِ وُلِدَ وَ یَوْمَ یَمُوْتُ وَ یَوْمَ یُبْعَثُ حَیًّا অর্থ : ‘‘এবং শান্তি— তাঁরই ওপর যেদিন জন্ম গ্রহণ করেছেন, যেদিন বেসালপ্রাপ্ত (খোদার সাথে মিলনপ্রাপ্ত) হবেন এবং যেদিন জীবিতাবস্থায় পুনরুত্থিত হবেন’’। [সূরা মারইয়ম, আয়াত -১৫]
উপরিউক্ত আয়াতে করীমায় আল্লাহ তা‘আলা হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস্ সালাম এর সম্পূর্ণ মিলাদ বর্ণনা করেছেন। আর এর আগে আল্লাহ পাক তাঁর বেলাদতের পূর্ববর্তী ঘটনাবলীও বর্ণনা করেছেন। এ কারণেই সুন্নী মুসলমানরা সর্বশেষ নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর মিলাদ উদ্যাপন করাকে বৈধ জেনেছেন। আরেক কথায়, পূর্ববর্তী নবী হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম সহ অন্যান্যদের দ্বারা নিজ মিলাদ উদ্যাপনের বিশুদ্ধ বর্ণনা আমরা পেয়ে থাকি।
২. আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন- وَالسَّلٰمُ عَلَیَّ یَوْمَ وُلِدْتُّ وَیَوْمَ اَمُوْتُ وَیَوْمَ اُبْعَثُ حَیًّا অর্থ : এবং ওই শান্তি আমার প্রতি যেদিন আমি জন্ম লাভ করেছি এবং যেদিন আমার মৃত্যু হবে, আর যেদিন জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হবো। [সূরা র্মায়াম, আয়াত-৩৩]
এ আয়াতে করীমার আগে আল্লাহ তা‘আলা মরিয়াম আলাইহিমাস্ সালাম এর সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করেছেন; তাঁর গর্ভে হযরত ঈসা নবী আলাইহিস্ সালাম এর জন্মের কথাও আল্লাহ তা‘আলা জানিয়েছেন। উপরিউক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম এর বাণী উদ্ধৃত করেন যা দ্বারা তিনি নিজের প্রশংসা করেছেন। এই বর্ণনা শৈলী হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম এর মিলাদ উদযাপন ছাড়া আর কিছু নয়। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত তথা সুন্নী মুসলমানও এই একই বর্ণনা শৈলী দ্বারা মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর মিলাদ উদযাপন করে থাকেন। হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস্ সালাম ও হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম এর ক্ষেত্রে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁদের মিলাদের বর্ণনা দিয়েছেন, আমরাও মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর বেলাদতের বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করে থাকি। অতএব, বিবেকবান সবাই এ ব্যাপারে স্বীকার করবেন যে মিলাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা আল্লাহ তা‘আলারই রীতি। তাই এটা প্রমাণিত যে মিলাদের ভিত্তি কুরআন মজীদেই বিদ্যমান।
৩. আল্লাহ পাক এরশাদ করেন- وَذَکِّرْہُمْ بِاَیَّامِ اللّٰہِ অর্থ : তাদেরকে (মানুষদেরকে) আল্লাহর দিনগুলো সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দিন। [সূরা ইব্রাহীম, আয়াত-৫]
এ আয়াতে করীমায় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবী হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম এর প্রতি এ আহবান জানিয়েছেন যেন তিনি তাঁর জাতিকে আল্লাহর দিনগুলো সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দেন। ‘‘আল্লাহর দিনগুলো’’ হলো সে সব দিন যাতে বড় বড় ঘটনা ঘটেছিল বা এমন সব দিন যেগুলোতে আল্লাহ পাক তাঁর সৃষ্টিকুলের প্রতি তাঁরই বড় নেয়ামত বর্ষণ করেছিলেন। ‘আল্লাহর দিনগুলোর’ ব্যাখ্যার পক্ষে কুরআন মজীদ সাক্ষ্য দেয়, যেখানে হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম যে উদ্ধৃত করা হয়েছে : ‘‘আর যখন মূসা আলাইহিস্ সালাম আপন সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, স্মরণ করো তোমাদের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহকে, যখন তিনি তোমাদেরকে ফেরআউনী সম্প্রদায়ের কবল থেকে মুক্তি দিয়েছেন, যারা তোমাদেরকে নিকৃষ্ট শাস্তি দিতো এবং তোমাদের পুত্রদের যবেহ্ করতো ও তোমাদের কন্যাদেরকে জীবিত রাখতো; এবং এতে তোমাদের প্রতিপালকের মহান অনুগ্রহ রয়েছে।’’ [সূরা ইব্রাহীম, আয়াত -৬]
উল্লিখিত আয়াতের সারমর্ম অনুযায়ী, হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম এর জাতি যেদিন ফিরআউন হতে মুক্তি লাভ করে সেদিনটি ‘‘আল্লাহর দিন’’ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে; অতএব মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম যেদিন এ ধরাধামে শুভাগমন করেন, সেদিনও ‘‘আল্লাহর দিন’’ হিসেবে বিবেচিত হবে। কেননা, মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে সারা বিশ্ব জগতকে মুক্ত করে হেদায়াত তথা সঠিক পথের আলোতে নিয়ে এসেছেন। তাই অন্যান্য ঘটনার দিন উদ্যাপনের চেয়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর বেলাদত দিবস উদ্যাপন অগ্রাধিকার পাবে। অন্যথায় আল্লাহ তা‘আলার রহমত (করুণা) অর্থাৎ বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি শোকরিয়া আদায় করা হবে না। এমতাবস্থায় আল্লাহ পাক আমাদেরকে শাস্তি দেবেন যেমনটি তিনি এরশাদ ফরমান- وَاِذْ تَاَذَّنَ رَبُّکُمْ لَءِنْ شَکَرْتُمْ لاََزِیْدَنَکُمْ وَلَءِنْ کَفَرْتُمْ اِنَّ عَذَابِیْ لَشَدِیْدٌ অর্থ : এবং স্মরণ করো, যখন তোমাদের প্রতিপালক শুনিয়ে দিলেন, যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও তবে আমি তোমাদেরকে আরও অধিক দেবো, আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তবে আমার শাস্তি কঠোর। [সূরা ইব্রাহীম, আয়াত-৭]